লাউচাপড়া পিকনিক স্পট, জামালপুর



লাউচাপড়া,জামালপুর

লাউচাপড়া পিকনিক স্পট,জামালপুর

ঘুরতে ভাল বাসেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করার মত ইচ্ছা কারো আছে বলে আমার মনেই হয় না। আর যদি এই ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ আসে কোন পাহাড় দেখার তবে তো কথাই নেই। এইতো গেল শীতের শেষ দিকে সুযোগ পেয়েছিলাম লাউ চাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্র ঘুরে আসার। এটি জামালপুর জেলায় অবস্থিত।


আমাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার শেষ সীমান্তে এবং জামালপুর জেলার সাথে হওয়ায় মোটর সাইকেল যোগে খুব সহজেই যেতে পেরেছিলাম। মোটর সাইকেল যোগে লাউ চাপড়ায় পৌঁছতে প্রায় বেলা ১ টা বেজে যায় আমাদের। আমরা গেটে প্রতিটি মোটর সাইকেলের জন্য ২০ টাকা ভাড়া দিয়েছি। অর্থাৎ মোটর সাইকেলে কতজন উঠেছেন সেটা কোন বিষয় নয়। মোটর সাইকেল নিয়ে ঢুকতে হলে প্রতিটি মোটর সাইকেল বাবদ ২০ টাকা গুণতে হবে।
লাউ চাপড়া অবসর কেন্দ্রটি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে ৭ হাজার ৯৯ একর ৬২ শতাংশ জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। যদিও অবসর কেন্দ্রটি জামালপুর জেলায় অবস্থিত তবুও ঢাকা থেকে যেতে হলে শেরপুর জেলার ভিতর দিয়ে যাওয়া খুবই সহজ হবে। ঢাকা থেকে শেরপুরগামী বাসে উঠে খুব সহজেই যেতে পারবেন। সারাবছরই এখানে দর্শনার্থীদের সমাগম থাকে। আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্কুল কলেজের পিকনিক বাস। এটি সুন্দর পিকনিক স্পটও বটে।

ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই সবুজ-শ্যামল ও দৃষ্টিনন্দন গাছপালা আপনার দৃষ্টি কেড়ে নেবে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখবেন সু-উচ্চ পাহাড়, শুনবেন পাখির কিচিরমিচির। ৫-৬ জনের গ্রুপে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে হেঁটে বেড়াবেন। দেখবেন রাবার বাগান। এছাড়াও আছে রাবার প্রসেসিং কারখানা। জেলা পরিষদের ডাক বাংলো পাহাড়িকা এই অবসর কেন্দ্রেই অবস্থিত। জামালপুর জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্মিত ৬০ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে উঠলে দেখবেন ঢেউ খেলানো সবুজ গাছপালার সমাহার। পাহাড়ের পাদদেশে দেখা মিলবে গারো আদিবাসীদের গ্রাম। তাছাড়াও দূর পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকেও রয়েছে তাঁদের আবাস। এছাড়াও আছে কোচ, হাজংসহ বিভিন্ন আদিবাসী। এখানে আছে দিঘলাকোনা, বালুঝুড়ি, সাতানিপাড়া, পলাশতলা, লাউ চাপড়া, মেঘাদল, শুকনাথ পাড়াসহ প্রভৃতি গ্রাম।
IMG_0358

এই পাহাড়ের পাদদেশে আবাদি জমিতে মাঝে মাঝে বন্য হাতি আসে। বন্য হাতি তাই দেখার আশা না করাই ভাল। হাতিগুলো সবসময় আসে না। তাই ভ্রমণকারীদের ভীত হওয়ার কিছুই নেই। হাতে রাম দা নিয়ে গরু চড়ানো এক বালককে জিজ্ঞেস করে এমনটিই জেনেছিলাম। রাম দা তাদের নিরাপত্তা ও হাতি তাড়ানোর কাজে আসে।

লাউ চাপড়া থেকে একটু দূরেই শেরপুর জেলার বিনোদন কেন্দ্র গজনি অবকাস ও মধুটিলা ইকোপার্ক। নিজস্ব যানবাহন না থাকলে অটোরিকসা বা নছিমন (স্থানীয় ভাষায় ভটভটি) ভাড়া করে যেতে পারবেন। দরদাম আগেই ঠিক করে নেয়া ভাল।
এখানে রয়েছে প্রচুর খনিজ সম্পদ। নুড়ি পাথর, বোল্ডার পাথরে সমৃদ্ধ এই বিনোদন কেন্দ্রটি। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও চোরাকারবারী কর্তৃক অবৈধভাবে গাছপালা কর্তন, বালি ও পাথর উত্তোলনের ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
unnamed (2)
পরিশেষে, এই শীতে হয়নি তো কি হয়েছে? নগর জীবনের ব্যস্ততায় যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, মন চাইবে একটু বিশ্রাম। ঠিক তখনি কাটিয়ে আসবেন সবুজের মাঝে পাহাড়ি গ্রামে। মনের মাঝে পুষে রাখুন, সামনের গ্রীষ্মের ছুটি কিংবা শীতকালীন ছুটিটা নাহয় শহর থেকে দূরের এই গ্রাম গুলোতেই কাটিয়ে আসবেন!

লাউচাপড়া নিয়ে একটি ভিডিও দেখতে নিচের বেগুনি কালার লেখায় ক্লিক করুন!


                         

কোথায় থাকবেন

রাতে এখানে থাকার জন্য দুটি রেস্ট হাউস অছে। একটি জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং অন্যটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বনফুল রিজর্ট। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসে থাকতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। যোগাযোগ করতে হবে প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, জামালপুর। ফোন- ০৯৮১-৬২৭১৬, ০৯৮১-৬৩৫১৪, ০৯৮১-৬৩২৪০। তবে বেসরকারি বনফুল রিজর্টটি আরো বেশি সজ্জিত ও সুযোগ সুবিধা সম্বলিত। এই রিজর্টে সাধারণ কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা এবং তাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ১৫০০ টাকা। যোগাযোগ- রিভার এন্ড গ্রীন ট্যুরস, এম আর সেন্টার, (৭ম তলা), বাড়ি-৪৯, সড়ক ১৭, বনানি বাজার, ঢাকা। ফোন- ৮৮২৬৭৫৯, ০৭৮৯-২২৪৫৯৩।



তথ্য সংক্ষেপঃ

রিসোর্টে পার্কিং ফি প্রতিটি বাস কিংবা কোস্টারের জন্য ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০টাকা, জীপ, টেম্পো, কার ৫০ টাকা, বেবি টেক্সি, ঘোড়ার গাড়ি ২০ টাকা, মোটর সাইকেল, ভ্যান গাড়ি ১০ টাকা, রিকশা ৫ টাকা, বাই সাইকেল ২ টাকা। এছাড়া লেকে নৌ বিহার করতেজনপ্রতি লাগবে ১০ টাকা, ওয়াচ টাওয়ার উঠতে ৩ টাকা এবং পিকনিক পার্টির রান্নাঘর ওপ্রতি চুলা ব্যবহারের জন্য দিতে হবে ৫০ টাকা।কিভাবে যাওয়া যায়:ঢাকা হতে বাসে কিংবা জামালপুর বা শেরপুর হতে সিএনজিতে বকশীগঞ্জ গিয়ে সেখান হতে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ধানুয়া-কামালপুরে যেতে হবে

No comments:

Post a Comment

Youtube Channel Image
Md Azijul Hakim Subscribe To watch more Videos
Subscribe